বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল আজ বাংলাদেশ। সদ্য যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ দূরদৃষ্টির মাধ্যমে মাত্র ২ বছরের মধ্যে প্রায় ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এনে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ এই উন্নয়নে তখন ভরকে যায় অনেকেই। সবচাইতে বড় ভয় ছিল পাকিস্তানের। কেননা বঙ্গবন্ধু প্রমাণ করে দিয়েছিলেন পাকিস্তানকে ছাড়া বাংলাদেশ কত দ্রুত উন্নতি করতে পারে। আর সেটি আরো একবার প্রমাণিত হচ্ছে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার মাধ্যমে। আজ বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির রোল মডেল। টানা এক দশক প্রায় ৭ শতাংশ জিডিপি ধরে রাখা বাংলাদেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে পৌঁছে যাবে বিশ্বে শক্তিশালী অর্থনীতির ২৫ দেশের তালিকায়।
বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়ত এই উন্নয়ন আরো আগেই সম্ভব হতো। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নে ভীত হয়ে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও দেশের অভ্যন্তরে থাকা খন্দকার মোশতাক-জিয়াউর রহমানদের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার। এদের লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকলে। কেননা তারা জানতো, এই পরিবারের যে কোন একজন বেঁচে থাকলে বাংলাদেশকে ধ্বংসের পরিকল্পনা সফল হবে না। কোনোভাবেই বাংলাদেশকে মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। বর্তমানে বিষয়টি প্রতিদিন প্রমাণ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে তুলনা করা হচ্ছে গত শতকের সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে। বাংলাদেশকে এশীয় প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে জানিয়েছেন এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন চ্যান। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) তথ্যানুসারে মহামারি করোনা মোকাবেলা করে চলতি বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৮ শতাংশ এবং আগামী বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭.২ শতাংশ। অন্যদিকে দেশে চলতি বছর মাথাপিছু জডিপি উন্নয়ন হবে ৫.৫ শতাংশ এবং আগামী বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫.৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপির হারে পাকিস্তানকে বেশ পেছনে ফেলে দিয়েছে এবং ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৪ বছর, যা প্রতিবেশি ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। ভারত ও পাকিস্তানে মানুষের গড় আয়ু যথাক্রমে ৭০ ও ৬৮ বছর। বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন নেতৃত্বের আসনে রয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠার কথা বলা যায়। এ দেশে ৩০০টি ওষুধ কোম্পানি রয়েছে, যারা স্থানীয় চাহিদার ৯৭ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। এমনকি তারা বৈশ্বিক বাজারেও ওষুধ রপ্তানি করছে। গত এক দশকে ঔষধ শিল্প থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে এগারো গুণ। বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭টি ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ১৪৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ।
বর্তমানে বিশ্বের ১৬৮টি দেশে কাজ করছেন বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ কর্মী। বিদেশ থেকে রেমিটেন্স অর্জন করা শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। ২০২০ সালে সব মিলিয়ে ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে এসেছে ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের পুরো সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। এটি এক বছরে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ রেমিটেন্সের নতুন রেকর্ড গড়েছে। সর্বশেষ জুলাই-ফেব্রুয়ারি ২০২০-২১ সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩.৫ শতাংশ বেশি। কোভিডের প্রভাবে যেখানে সারা বিশ্বে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমেছে, সেখানে বাংলাদেশে চলতি বছরেও প্রবাসীদের রেমিটেন্স থেকে আয় বাড়বে বলে ধারণা প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) অনুপাতে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে তৃতীয়। যা জিডিপির ৫.৫ শতাংশ, রপ্তানি আয়ের অর্ধেক (৫৪%) এবং প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের প্রায় তিনগুণ (নিট বৈদেশিক সাহায্য ৬ বিলিয়ন)।
বিদেশে থাকা শ্রমিকদের সার্বিক সহায়তা প্রদান ও তাদের জন্য অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ সুবিধাসহ প্রবাস কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যার সুফল পাচ্ছেন প্রবাসীরা। সেই সঙ্গে বৈধ পথে দেশে অর্থ প্রেরণ এবং প্রবাসীদের বিনিয়োগের বিভিন্ন সুযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ সরকার। যার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে দেশের কোটি মানুষ। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের শ্রম বাজারে নতুন সুযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ। সাধারণ শ্রমিকের পাশাপাশি বর্তমানে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণ করছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে প্রযুক্তিতে দক্ষ বিশেষজ্ঞরাও সুযোগ পাচ্ছেন দেশের বাইরের চাকরির বাজারে। প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হচ্ছিলো, তবে গত ২০২০ সালে কেভিড-১৯ জনিত কারণে ২.২ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়।
Leave a Reply